Recents in Beach

ওমর (রাঃ) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন - Islamic Stories

ওমর (রাঃ) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন


উমার (রাঃ) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন - Islamic Stories
উমার (রাঃ)-যেভাবে-ইসলাম-গ্রহণ-করলেন - Islamic-Stories


ওমর (রাঃ) ইসলাম স্বীকার নবুওয়াতের ষষ্ঠ সনের যুল-হাজ্জ মাসে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইসলাম কবূলের জন্যে আল্লাহর দরবারে দু’আ করেছিলেন। নবী (সাঃ) বলেছিলেনঃ ‘‘হে আল্লাহ্! ওমর বিন খাত্তাব ও আবু জাহেল বিন হেশাম এর মধ্য হতে আপনার নিকট যে অধিক প্রিয় তাকে দিয়ে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। আল্লাহর কাছে ওমর (রাঃ) বেশি প্রিয় ছিলেন”। (বুখারী)
ওমর (রাঃ) অতিশয় দৃঢ় প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন। মুশরিক থাকাবস্থায় তিনি মুসলমানদেরকে যন্ত্রণা দিতেন এবং তাদের ওপর জটিল ছিলেন।

ওমর (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা এইযে, তাঁর বোন ফাতেমা বিনতে খাত্তাব এবং তাঁর স্বামী সাঈদ বিন যায়েদ লুকিয়ে ইসলাম  করেছিল। খাব্বাব (রাঃ) ফাতেমাকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। একদিন ওমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের ওপর আক্রমণ করার জন্য তলোয়ার নিয়ে বের হলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ জনের মত মানুষ নিয়ে সাফা পাহাড়ের কাছে ১টি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখানে হামযাহ, আবু বকর এবং আলী (রাঃ)ও ছিলেন। রাস্তায় নুআইম ইবনে আব্দুল্লাহ এর সঙ্গে লক্ষ্য হলো।

নুআইম ইবনে আব্দুল্লাহও তার বংশের লোকদের জুলিমের ভয়ে ইসলাম  রেখেছিল।
তিনি ওমরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কোথায় যাচ্ছেন? ওমর বললেনঃ শুনেছি মুহাম্মাদ বেদীন হয়ে গেছে, সে আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করেছে ও আমাদের মা’বূদদেরকে গালি দিচ্ছে ও আমাদের জ্ঞানীদেরকে বোকা বলছে ও আমাদের দ্বীনকে দোষারূপ করছে। একারণে তাকে  করতে যাচ্ছি।

নুআইম বললেনঃ আপনার কি মনে হয় মুহাম্মাদকে হত্যা করলে তার জাতের লোকেরা আপনাকে ছেড়ে দিবে? তা ছাড়া মুহাম্মাদকে হত্যার পূর্বে নিজের ঘর ঠিক করা দরকার। তোমার বোন ও ভগ্নীপতি সাঈদ বিন যায়েদ ইসলাম বরণ করেছে। এ কথার দ্বারা নুআইমের উদ্দেশ্য ছিল ওমরকে মুহাম্মাদ (সাঃ)এর দিকে যাত্রা হতে বিরত রাখা।

ওমর মুহাম্মাদকে হত্যার ডিসিশন বদলানো করে বোনের বাড়ির দিকে যাত্রা করল। এই সময় খাব্বাব ফাতেমা এবং তাঁর জামাই সাঈদকে কুরআন মাযীদের সূরা তহা পড়াচ্ছিলেন। উমারের আগমণ অনুভব করে খাব্বাব কক্ষের এক সাইডে লুকিয়ে গেলেন এবং ফাতেমাও কুরআনের কপিটি লুকিয়ে ফেললন। তবুও ওমর এর আগেই খাব্বাবের কন্ঠস্বর শুনেছিল।

ওমর কামরায় প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলঃ আমি কিসের আওয়াজ শুনতে পেলাম? তারা বললঃ তুমি কিছুই শুনতে পাওনি। সে বললঃ আল্লাহর শপথ! আমি শুনেছি, তোমরা উভয়েই নাকি মুহাম্মাদের অনুসারী হয়ে গিয়েছ। এ বলে সাঈদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে ক্ষত করা শুরু করল। ফাতেমা প্রতিরোধ করতে গেলে তার মুখমন্ডলে ক্ষত করে রক্ত প্রবাহিত করে দিল। অবশেষে তারা স্বীকার করল যে, আমরা ইসলাম স্বীকার করেছি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান এনেছি। তোমার মন যা চায় তাই করতে পার।

ওমর তার বোনের চেহারায় রক্ত দেখে লজ্জিত হল এবং বললঃ তোমরা যে পুস্তিকাটি পাঠ করতেছিলে তা আমাকে দাও। আমি দেখতে চাই এতে কি রয়েছে। ফাতেমা বললঃ আমাদের ভয় হচ্ছে, তুমি এটিকে অপদস্ত করবে ও আমাদের সবাইকে তা আর ফেরত দিবেনা। ওমর দেব-দেবীর নামে অঙ্গীকার করে বললঃ নিশ্চয়ই তা ফেরত দিবে। ফাতেমা বললঃ তুমি অপবিত্র। পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া ভিন্ন কেউ কুরআন ছোঁয়া করতে পারেনা। ওমর উঠে স্নান করে আসল। ফাতেমা তার হাতে কুরআন মযীদ দেয়ার পর সে সূরা ত্বহা পাঠ করল। সূরা ত্বহার প্রথমাংশ পাঠ করেই সে বললঃ  বেশ ভালো এই কালাম।
এ কথা শুনে খাব্বাব বের হয়ে এসে বললঃ আপনার ব্যাপারে আল্লাহর নবীর দু’আ কবূল হয়ে গেছে। কেননা আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাব অথবা আবু জাহেল ইবনে হিশাম- এ দু’জনের একজনের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী কর। হে ওমর! তুমি আল্লাহকে ভয় কর। হে ওমর! তুমি আল্লাহকে ভয় কর।

ওমর (রাঃ) তখন বললেনঃ হে খাব্বাব! মুহাম্মাদ কোথায় আছে? আমাকে দেখিয়ে দাও। আমি তাঁর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করবো। খাব্বাব বললেনঃ তিনি একদল সাহাবীসহ সাফা পাহাড়ের নিকস্থ কোন বাড়িতে অবস্থান করছেন। ওমর তরবারি হাতে নিয়ে সেদিকে চললেন। দরজায় গিয়ে করাঘাত করার সঙ্গে সাথে একজন দাড়িয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখলেন, ওমর উন্মুক্ত তরবারি হাতে নিয়ে উপস্থিত। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বার্তা দিলেন।

হামযাহ (রাঃ) বললেনঃ তাকে আসতে বল। সে যদি ভাল নিয়তে এসে থাকে তাহলে তার সাথে আমরা ভাল ইউজ করব। আর যদি ভালো না নিয়তে এসে থাকে কিন্তু আমরা তার তলোওয়ার দিয়েই তাকে  করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে প্রবল বৃষ্টিপাত পারমিশন দাও। সে মধ্যে প্রবেশ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতার চাদর ধরে দৃঢ় করে ঝোঁক দিলেন ও বললেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র ওমর! কি কারণে তুমি এইখানে এসেছো? আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয় তোমার উপরে আল্লাহর শাস্তি নাজিল হওয়ার পূর্বে বিরত হবেনা।

এ কথা শুনে ওমর(রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি এসেছি আল্লাহর প্রতি এবং আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়নের জন্যে। এই কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এইরকম অভিজাত গলায় তাকবীর পাঠ করলেন, যা শুনে কক্ষের সকলেই বুঝতে সক্ষম হল যে, ওমর মুসলমান হয়ে গেছে। মুসলমানগণ ওখান থেকে বের হয়ে আসলেন।

এভাবেই ওমর(রাঃ) ও হামযাহ (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তাঁরা শক্তিশালী হল।
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ ওমর (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমরা সম্মানিত ছিলাম।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে আশা হল তিনি যেন ইসলাম ও মুসলমানদের এই অসহায় অবস্থায় ওমরের মত মানুষ দিয়ে তার দ্বীনকে শক্তিশালী করেন।
– মাওলানা বশিরুল হক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ