জান্নাতি নারীর গুণাবলী
চারদিক হতে ভেসে আসছে নির্দয় এবং পাষণ্ড স্বামী নামের হিংস্র পশুগুলোর আক্রমণের শিকার কাতর এবং অবলা মহিলার দীন বিলাপ। অহরহ ঘটমান দায়ের কোপ, লাথির আঘাত, অ্যাসিডে ঝলসানো, অগ্নিতে পুড়ানো, বিষ প্রয়োগ ও বালিশ চাপাসহ নানা দুঃসহকায়দায় মেয়ে মৃত্যুর ঘটনা। কারণ তাদের পাঠ্য সুবিন্যস্ত তালিকা হতে ওঠে গেছে পৃথিবী নবির বাক্য “তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।”
“তোমাদের ভিতরে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের কাছে উত্তম।”
অপর দিকে চারদিক বিষিয়ে তুলছে, তাগুতি নিয়মের দোহাই পেড়ে পতিভক্তিশূন্য, মমতা ভালোবাসাহীন পত্নী নামের ডাইনীগুলোর অবজ্ঞার পাত্র, দরিদ্র জামাইয়ের ক্ষোভ ও ক্রোধে ভরা আর্তনাদ। কারণ, তারা রাসূলের শিক্ষা হতে বঞ্চিত “আল্লাহ ব্যতীত কাউকেসেজদা করার সম্মতি থাকলে, আমি নারীদের আদেশ দিতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা কর।” মান-অভিমানের প্রতারণা আর কম হীন ঘটনার ফলে সাজানো-গোছানো, সুখের সংসার, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও তছনছ হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে।
ক্ষণিকেই বিস্মৃতির আস্তাকুরে পর্যবসিত হলো তৎকালীন সব মিষ্টি-মধুর স্মৃতি, আনন্দঘন-মুহূর্ত। দায়ী কোনো সময়েই স্বামী, কোনো সময়েই স্ত্রী। আরো দায়ী বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিদ্যমান ধর্মহীন, পাশ্চাত্যপন্থী সিলেবাস। যা প্রস্তুত করেছে ইংরেজ এবং এদেশের এইরকম শিক্ষিত সমাজ, যারা রঙে বর্ণে বাঙালী হলেও ভাবা চেতনা এবং মন- মানসিকতায় ইংরেজ। মায়ের উদর থেকে করুণ অবস্থায় আবির্ভাব গ্রহণকারী মানুষের তৈরি এই সিলেবাস অসম্পূর্ণ, যা সর্বক্ষেত্রে সঠিক পক্ষ নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ব্যর্থ। যে সিলেবাসে শিক্ষিত হয়ে বিবি জামাইয়ের অধিকার সম্মন্ধে জানে না, স্বামীও থাকে স্ত্রীর লভ্য সম্মন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। একজন অপর জনের প্রতি থাকে বীতশ্রদ্ধ। ফলে পরস্পরের মাঝে বিরাজ করে সমঝোতা ও সমন্বয়ের সংকট। সম্পূরকের পরিবর্তে প্রতিপক্ষ হিসেবে মীমাংসা করে একে অপরকে। বিশ্বাস রাখতে পারছে না কেউ কারো ওপর। এজন্য স্বনির্ভরতার জন্য নারী-পুরুষ সবাই অসম প্রতিযোগিতার ময়দানে ঝাঁপ দিচ্ছে। মূলত হয়ে পড়ছে পরনির্ভর, খাবার-দাবার, পরিচ্ছন্নতা- সাধুতা এবং সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রেও ঝি-চাকর অথবা বাচ্চা আশ্রমের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। ফলে যা হবার এজন্য হচ্ছে… কিংবা মৌলিক শিক্ষা ও মানব জাতির সঠিক পাথেয় আল-কুরআনের দিকনির্দেশনা খারিজ এবং সংকোচন হয়ে আশ্রয় নিয়েছে কুঁড়ে ঘরে, কর্তৃত্বশূন্য কয়েকটি মানবের হৃদয়ে। তাই, স্বভাবতই মানব অন্ধকারাচ্ছন্ন, ঠিক উপায় হতে বিচ্যুত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় নিজদের প্রবলেম নিয়ে। দোদুল্যমান নিজস্ব ডিসিশনের ব্যাপারে। আমাদের প্রয়াস এই ক্রান্তিকালে নারী-পুরুষের বিশেষ অধ্যায়, তথা দাম্পত্য জীবনের জন্য কুরআন-হাদিস সিঞ্চিত ১টি আলোকবর্তিকা দাখিল করা, যা দাম্পত্য জীবনে বিশ্বস্ততা এবং সহনশীলতার আবহ সৃষ্টি করবে। কলহ, অসহিষ্ণুতা এবং অশান্তি বিদায় দেবে চিরতরে। বখশিশ দেবে আনন্দ এবং শান্তিময় অভিভাবকপূর্ণ নিরাপদ পরিবার। ভূমিকা বইটি কুরআন, হাদিস, অনুকরণীয় মনীষীগণের উপদেশ এবং কতিপয় বিদ্বান আলেমের বাণী এবং এক্সপেরিন্সের আলোকে সংকলন করা হয়েছে। বইটিতে মূলত নারীদের বিষয়টি অধিক পেয়েছে, অবশ্য পুরুষদের প্রসঙ্গও আলোচিত হয়েছে, তবে তা প্রাসঙ্গিকভাবে। যে নারী- পুরুষ আল্লাহকে পেতে চায়, আখেরাতে সফলতা অর্জন করতে চায়, তাদের জন্য বইটি পাথেয় হবে বলা হয়ে থাকে আমি কঠিন আশাবাদী।
আল্লাহ তা’আলা বলেন :
ﺎَﻣَﻭ ٍﻦِﻣْﺆُﻤِﻟ َﻥﺎَﻛ ﺎَﻟَﻭ ٍﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ﺍَﺫِﺇ ﻰَﻀَﻗ
ُﻪُﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺍًﺮْﻣَﺃ ْﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَﻳ ُﻢُﻬَﻟ
ُﺓَﺮَﻴِﺨْﻟﺍ ْﻦِﻣ ْﻢِﻫِﺮْﻣَﺃ ْﻦَﻣَﻭ ِﺺْﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ
ُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ْﺪَﻘَﻓ َّﻞَﺿ ﺎًﻨﻴِﺒُﻣ ﺎًﻟﺎَﻠَﺿ ﴿
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ:৩৬﴾
“আর রব ও তাঁর রাসূল কোন আদেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও মহিলার জন্য নিজদের বিষয়ে আরেক কিছু এখতিয়ার করার আধিপত্য থাকে না; আর যে প্রভু এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য
করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”
রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
“আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যে অগ্রাহ্য করা করবে। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করবে হে আল্লাহর রাসূল? উনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হল, সে অগ্রাহ্য করা করল।” পরিশেষে আল্লাহর কাছে আশা এই বইটি
দ্বারা আমাকে এবং সকল মুসলমানকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক সম্প্রদান করুন। বইটি তার সন্তুষ্টি অর্জনের অসিলা হিসেবে করুন। সে দিনের সঞ্চয় হিসেবে রক্ষিত রাখুন, যে দিন কোন সন্তান, কোন উপকারে আসবে না, কেবলমাত্র সুস্থ অন্তকরণ ছাড়া। আমাদের লেটেস্ট ঘোষণা সব প্রশংসা সৃষ্টিকর্তা তাআলার জন্য, যিনি জগতের প্রতিপালক।
নারীর উপর পুরুষের অধিকার : খোদা তাআলা বলেন :
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এই কারণে যে প্রভু তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন ও যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ হতে ব্যয় করে।” হাফেজ ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে
বলেন, “পুরুষ মানবীর তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ সে তার গার্জিয়ান, অভিভাবক, তার উপর কর্তৃত্বকারী ও তাকে সংশোধনকারী, যদি সে বিপদগামী বা লাইনচ্যুত হয়।”
এ ব্যাখ্যা রাসূলের হাদিস দ্বারাও সমর্থিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যদি আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, কিন্তু নারীদের নির্দেশ করতাম স্বামীদের সেজদার করার জন্য। সে আল্লাহর প্রতিজ্ঞা করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, মহিলা তার স্বামীর সব হক আদায় করা ব্যতীত, আল্লাহর হক আদায়কারী হিসেবে গণ্য হবে না। এমনকি জামাই যদি তাকে ছোট বাচ্চা প্রসবস্থান হতে তলব করে, সে তাকে নিষেধ করবে না।”
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারীনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন।”
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এই আয়াতের তাফসিরেবলেন, ‘সুতরাং নেককার রমণী সে, যে আনুগত্যশীল। অর্থাৎ যে রমণী সর্বদা বরের আনুগত্য করে… মানবীর জন্য রব এবং তার রাসূলের হকের পর জামাইয়ের হকের মত অবশ্য উচিত কোন হক নেই।’ হে নারীগণ, তোমরা এর প্রতি নিরলস দৃষ্টি রাখ। বিশেষ করে সে নারী, যারা সীমালঙ্ঘনে অভ্যস্ত, স্বেচ্ছাচার প্রিয়, স্বামীর অবাধ্য ও পুরুষের শেপ ধারণ করে। স্বাধীনতা এবং মেয়ে অধিকারের নামে কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, যখন স্পৃহা বাইরে যাচ্ছে আর কামরায় ফিরছে। যখন যা মন চাচ্ছে এইজন্য করে যাচ্ছে। তারাই দুনিয়া ও দুনিয়ার চাকচিক্যের বিনিময়ে আখেরাত বিক্রি করে দিয়েছে। হে বোন, সতর্ক হও, চৈতন্যতায় ফিরে আস, তাদের রাস্তা এবং সঙ্গ ছেড়ে করে। তোমার পশ্চাতে এমন দিন ধাবমান যেটার বিভীষিকা বাচ্চাদের পৌঁছে দিবে বার্ধক্যে। নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কারণ : পুরুষরা নারীদের ও তাদের উপর
কর্তৃত্বশীল। যার মৌলিক কারণ উভয়ের শারীরিক গঠন, প্রাকৃতিক স্বভাব, যোগ্যতা এবং শক্তির পার্থক্য। স্রষ্টা তা’আলা নারী-পুরুষকে অন্য আরেক ফোকাস এবং ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও অবয়বে তৈরি করেছেন।
দুনিয়ার সর্বোত্তম নেককার বউ : আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’ এনজয়েবল অর্থ হল নেককার নারী।” বুখারি এবং মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি গুণ দেখে নারীদের বিবাহ করা হয়Ñ সম্পদ, গোত্র মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং দীনদারি। কিন্তু ধার্মিকতার পক্ষ প্রাধান্য দিয়েই তুমি কামিয়াব হও নয়তো তোমার হাত ধুলি ধুসরিত হবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি বস্তু কল্যাণযুক্ত লক্ষণ। যথা : ১. নেককার নারী, ২. প্রশস্ত ঘর, ৩. সৎ প্রতিবেশী, ৪. সরল প্রকৃতির আনুগত্যশীল-পোষ্য বাহন পক্ষান্তরে অপর চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার মধ্যে একজন বদকার নারী।” এসব আয়াত এবং হাদিস পুরুষদের উদাহরণসরূপ নেককার মানবী বরণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি আগ্রহ দেয় নারীদেরকে মানবীর সব গুনাবলী অর্জনের প্রতি। যাতে তারা আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নেককার মানবী হিসেবে গণ্য থেকে পারে।
প্রিয় মুসলিম বোন, তোমার সম্মুখে সে উদ্দেশেই নেককার নারীদের গুণাবলী দাখিল করা হচ্ছে। যা চয়ন করা হয়েছে কুরআন, হাদিস ও পথিকৃৎ আদর্শবান নেককার আলেমদের বাক্য ও পরামর্শ থেকে। তুমি এগুলো শিখার স্বীকার কর। ঠিক রূপে এর অনুশীলন আরম্ভ কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইলম আসে শিক্ষার মাধ্যমে। শিষ্টচার
আসে সহনশীলতার মাধ্যমে। যে অনুগ্রহ খোজ করে, স্রষ্টা তাকে সুপথ দেখান।”
নেককার মহিলার গুণাবলি : খোদা তা’আলা বলেন,
ইবনে কাসির রহ. লিখেন,ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ শব্দের অর্থ নেককার নারী, ইবনে আব্বাস এবং আদার্স মুফাসসিরের মতে ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ শব্দের অর্থ স্বামীদের আনুগত্যশীল নারী, আল্লামা সুদ্দি ও অন্যান্য মুফাসসির বলেন ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺐﻴﻐﻠﻟ শব্দের অর্থ বরের অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব ও জামাইয়ের রক্ষাকারী নারী।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে মানবী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের রোজা রাখে, ব্যক্তিগত লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও জামাইয়ের আনুগত্য করে তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের সেসব গৃহিণী জান্নাতি, যারা মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, পতি- সঙ্গ প্রিয়Ñ যে পতি গোস্বা করলে সে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি খুশি না হওয়া পর্যন্ত, আমি দুনিয়ার কোন স্বাদ করব না।”
সুনানে নাসায়িতে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একদা জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল, কোন মেয়ে সব চেয়ে ভাল? উনি বললেন, “যে ললনা স্বামীকে আনন্দিত করে, যখন জামাই তার দিকে দৃষ্টি দেয়। যে মানবী জামাইয়ের আনুগত্য করে, যখন পতি তাকে নির্দেশ দেয়, যে নারী স্বামীর সম্পদ এবং আপন নফসের ব্যাপারে, এইরকম কোনো কর্মে লিপ্ত হয় না, যা বরের অপছন্দ।” হে মুসলিম নারী, নিজকে একবার পরখ কর, চিন্তা করে দেখ এর সাথে তোমার ঐক্য রয়েছে কতটুকু। আল্লাহকে সুখী করার রাস্তা অনুসরণ কর। দুনিয়া-আখেরাতের মঙ্গল অর্জনের প্রতিজ্ঞা ধারণ কর। ব্যক্তিগত স্বামী ও সন্তানের ব্যাপারে যত্নশীল হও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার কি বর আছে? সে বলল হ্যাঁ, রাসূল বললেন, তুমি তার কাছে কেমন? সে বলল, আমি তার সন্তুষ্টি অর্জনে কোন ত্র“টি করি না, কিন্তু আমার সাধ্যের বাইরে হলে ভিন্ন কথা। রাসূল বললেন, লক্ষ্য রেখ, সে-ই তোমার জান্নাত বা জাহান্নাম।”
উপরের আলোচনার আলোকে নেককার মানবীর গুণাবলি :
১. নেককার : ভাল কাজ সম্পাদনকারী ও আপন রবের হক আদায়কারী নারী।
২. আনুগত্যশীল : বৈধ কাজে বরের আনুগত্যশীল নারী।
৩. সতী : স্বয়ং নফসের হেফাজতকারী নারী, বিশেষ করে জামাইয়ের অবর্তমানে।
৪. হেফাজতকারী : বরের অর্থ ও নিজ সন্তান হেফাজতকারী নারী।
৫. আগ্রহী : জামাইয়ের লাইকের পোশাক ও সাজ গ্রহণে আগ্রহী নারী।
৬. সচেষ্ট : স্বামীর গোস্বা নিবারণে সচেষ্ট নারী। রিজন হাদিসে এসেছে, স্বামী মহিলার জান্নাত বা জাহান্নাম।
৭. সচেতন : বরের ডিমান্ডের প্রতি সচেতন নারী। বরের স্পৃহা পূর্ণকারী।
যে মানবীর মধ্যে এসব গুণ বিদ্যমান, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্য মতে জান্নাতী। তিনি বলেছেন, “যে রমণী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের রোজা রাখে, নিজস্ব সতীত্ব হেফাজত করে এবং জামাইয়ের আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।”
আনুগত্যপরায়ন নেককার মহিলার দৃষ্টান্ত :
শাবি ব্যাখা করেন, একদিন আমাকে শুরাই বলেন, “শাবি, তুমি তামিম গোত্রের মেয়েদের শাদি কর।
তামিম গোত্রের মেয়েরা ভীষণ বুদ্ধিমতী। আমি বললাম, আপনি কীভাবে জানেন তারা বুদ্ধিমতী? তিনি বললেন, আমি কোনো জানাজা থেকে গৃহ ফিরছিলাম, রাস্তার পাশেই ছিল তাদের কারো বাড়ি। লক্ষ্য করলাম, জনৈক বৃদ্ধ ভদ্র মহিলা একটি ঘরের দরজায় বসে আছে, তার পাশেই রয়েছে সুন্দরী এক যুবতী। মনে হল, এমন রূপসী বেটি আমি আর কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে মেয়েটি কেটে পড়ল। আমি পানি চাইলাম, তা সত্ত্বেও আমার পিপাসা ছিল না। সে বলল, তুমি কেমন পানি লাইক কর, আমি বললাম যা উপস্থিত আছে। ভদ্র মহিলা মেয়েকে ডেকে বলল, দুধ নিয়ে আস, মনে হচ্ছে সে বহিরাগত। আমি বললাম, এই বেটি কে? সে বলল, জারিরের বেটি জয়নব। হানজালা গোত্রের ও। বললাম, বিবাহিতা না অবিবাহিতা? সে বলল, না, অবিবাহিতা। আমি বললাম, আমার নিকট তাকে বিবাহ দিয়ে দাও। সে বলল, তুমি যদি তার কুফু হও, দেওয়ার জন্য পারি। আমি বাড়িতে পৌঁছে দুপুরবেলা সামান্য বিশ্রাম নিতে শোবার কামরায় গেলাম, কোনো মতে আখিতে নিদ্রা ধরল না।
জোহর নামাজ পড়লাম। অতঃপর আমার সম্মানীয় কয়েকজন বন্ধু, যেমনÑ আলকামা, আসওয়াদ, মুসাইয়্যেব এবং মুসা ইবনে আরফাতাকে সাথে করে মেয়ের চাচার বাড়িতে গেলাম। সে আমাদের সাদরে করল। তারপর বলল, আবু উমাইয়্যা, কি উদ্দেশ্যে আসা? আমি বললাম, আপনার ভাতিজি জয়নবের উদ্দেশ্যে। সে বলল, তোমার ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ নেই! তারপর সে আমার কাছে তাকে বিবাহ দিল। মেয়েটি আমার জালে সীমাবদ্ধ হয়ে খুবই লজ্জা বোধ করল। আমি বললাম, আমি তামিম বংশের নারীদের কী ধ্বংস করেছি? তারা কি জন্য আমার ওপর অসন্তুষ্ট? পরক্ষণই তাদের কঠোর স্বভাবের কথা আমার মনে পড়ল। ভাবলাম, তালাক দিয়ে দেব। পুনরায় ভাবলাম, না, আমিই তাকে আপন করে নিব। যদি আমার মনপুত হয়, ভাল, অন্যথায় তালাকই দিয়ে দেব। শাবি, সে রাতের মুহূর্তগুলো এতো আনন্দের ছিল, যা ভোগ না করলে অনুধাবন করার জো নেই। খুবই ভালো ছিল সে সময়টা, যখন তামিম জাতের মেয়েরা তাকে নিয়ে আমার নিকট এসেছিল। আমার মনে পড়ল, রাসূলের সুন্নতের কথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “স্ত্রী প্রথম কক্ষে প্রবেশ করলে স্বামীর কর্তব্য, দু’রাকাত নামাজ পড়া, স্ত্রীর মধ্যে সুপ্ত অনুগ্রহ কামনা করা এবং তার ভিতরে লুকিত অনিষ্ঠ থেকে পানাহ চাওয়া।” আমি নামাজ শেষে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার সঙ্গে নামাজ পড়ছে। যখন নামাজ শেষ করলাম, মেয়েরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমার বস্ত্র পালটে সুগন্ধি মাখা কম্বল আমার উপর টেনে দিল। যখন সবাই চলে গেল, আমি তার নিকটবর্তী হলাম ও তার শরীরের এক সাইডে হাত বাড়ালাম। সে বলল, আবু উমাইয়্যা, রাখ।
অতঃপর বলল,
“আমি একজন অভিজ্ঞতা শূন্য অচিন নারী। তোমার পছন্দ অপছন্দ আর নিসর্গ রীতির ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। আরো বলল, তোমার বংশীয় একজন রমণী তোমার বিবাহে সীমাবদ্ধ ছিল, আমার বংশেও সে রূপ বিবাহিতা মহিলা বিদ্যমান আছে, তা সত্ত্বেও আল্লাহর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তুমি আমার মালিক হয়েছ, আজকাল আল্লাহর আদেশ মোতাবেক আমার সঙ্গে ইউজ কর। হয়তো ভালভাবে রাখ, নায়তো সুন্দরভাবে আমাকে বিদায় দাও। এটাই আমার কথা, আল্লাহর নিকট তোমার ও আমার জন্য মাগফিরাত কামনা করছি।” শুরাই বলল, শাবি, সে মুহূর্তেও আমি মেয়েটির কারণে খুতবা দিতে আয়ত্ত হয়েছি।
অতঃপর আমি বললাম,
তুমি এমন কতিপয় কথা বলেছ, যদি তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক, তোমার কপাল ভাল। আর যদি পরিত্যাগ কর, তোমার ভাগ্য মন্দ। আমার পছন্দ আমার অপছন্দ আমরা দু’জনে একজন। আমার মধ্যে ভাল দেখলে মার্কেটিং করবে, আর খারাপ কয়েকটি দৃষ্টিগোচর হলে রাখবে। সে আরো কিছু কথা বলেছে, যা আমি ভুলে গেছি। সে বলেছে, আমার আত্মীয় স্বজনের আসা-যাওয়া তুমি কোন দৃষ্টিতে দেখ? আমি বললাম, ঘনঘন আসা-যাওয়ার দ্বারা ডিস্টার্ব করা পছন্দ করি না। সে বলল, তুমি পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে যার ব্যাপারে সম্মতি দেবে, তাকে আমি কক্ষে প্রবেশ করার পারমিশন দেব। যাহার বিষয়ে নিষেধ করবে, তাকে আমি সম্মতি দেব না। আমি বললাম, এরা ভাল, ওরা ভাল না। শুরাই বলল, শাবি, আমার জীবনের সকল চেয়ে আনন্দদায়ক অধ্যায় হচ্ছে, সে রাতের মুহূর্তগুলো। পূর্ণ ১টি বছর বিগত হল, আমি তার ভিতরে আপত্তিকর কতিপয় দেখিনি। একদিনের ঘটনা, ‘দারুল কাজা’ হতে বাড়ি ফিরে
দেখি, কামরার ভেতর একজন মেয়ে তাকে পরামর্শ দিচ্ছে; নির্দেশ দিচ্ছে আর নিষেধ করছে। আমি
বললাম সে কে? বলল, তোমার শ্বশুর বাড়ির অমুক বৃদ্ধ। আমার বুকে সন্দেহ মুছে হল। আমি
বসার পর, ভদ্র মহিলা আমার সামনে এসে হাজির হল। বলল, আসসালামু আলাইকুম, আবু উমাইয়্যা।
আমি বললাম, ওয়া লাইকুমুসসালাম, আপনি কে? বলল, আমি অমুক; তোমার শ্বশুর বাড়ির লোক।
বললাম, প্রভু তোমাকে কবুল করুন। সে বলল, তোমার গৃহিণী কেমন পেয়েছ? বললাম, অতিশয় সুন্দর। বলল, আবু উমাইয়্যা, নারীরা দু’সময় অহংকারের শিকার হয়। পুত্র সন্তান প্রসব করলে আর বরের কাছে ভীষণ প্রিয় হলে। কোন বিষয়ে তোমার হলে লাঠি দিয়ে সরল করে দেবে। মনে রাখবে, পুরুষের ঘরে আহ্লাদি মানবীর ন্যায় মন্দ আর কোন বস্তু নেই। বললাম, তুমি তাকে বেশ ভালো ভদ্রতা শিক্ষা দিয়েছ, ভাল জিনিসের হ্যাবিট গড়ে দিয়েছ তার মধ্যে। সে বলল, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আসা-যাওয়া তোমার কেমন লাগে? বললাম, যখন ইচ্ছে তারা আসতে পারে। শুরাই বলল, অতঃপর সে মহিলা প্রতি বছর একবার করে আসত আর আমাকে উপদেশ দিয়ে যেত। সে মেয়েটি বিশ বছর আমার সংসার করেছে, একবার ছাড়া কক্ষনো তিরস্কার করার প্রয়োজন হয়নি। তবে ভুল সেবার আমারই ছিল।
ঘটনাটি এমন, ফজরের দু-রাকাত সুন্নত পড়ে আমি কামরায় বসে আছি, মুয়াজ্জিন একামত দিতে আরম্ভ করল। আমি তখন গ্রামের মসজিদের ইমাম। দেখলাম, একটা বিচ্ছু হাঁটাচলা করছে,আমি একটা পাত্র উঠিয়ে তার ওপর রেখে দিলাম। বললাম, জয়নাব, আমার আসা পর্যন্ত তুমি নড়াচড়া করবে না। শাবি, তুমি যদি সে মুহূর্তটা দেখতে! নামাজ শেষে কামরায় ফিরে দেখি, বিচ্ছু সেখান হতে বের হয়ে তাকে দাঁতের আঘাত করেছে। আমি তৎক্ষণাৎ লবণ এবং সাক্ত তলব করে, তার আঙুলের ওপর মালিশ করলাম। সূরায়ে ফাতেহা, সূরায়ে নাস এবং সূরায়ে ফালাক পড়ে তার ওপর দম করলাম।”
দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য :
১. জামাইয়ের অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার ঊর্ধ্বে উঠে না।
(ক). পলাতক গোলামের নামাজ, যতক্ষণ না সে মনিবের নিকট ফিরে আসে।
(খ). সে মহিলার নামাজ, যে নিজস্ব স্বামীকে রেখে রাত যাপন করে।
(গ). সেআমিরের নামাজ, যেটার উপর তার অধীনরা অসন্তুষ্ট।”
২. জামাইকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। ইমাম আহমদ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস ব্যাখা করেন, “দুনিয়াতে যে মেয়ে তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে মানবীকে টার্গেট করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, সৃষ্টিকর্তা তোমার সংহার করুন। সে তো তোমার নিকট ক’দিনের কুটুম মাত্র, অতি শীঘ্রই তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে।”
৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি দেবেন না, যে নিজস্ব বরের কৃতজ্ঞতা কবুল করে না, কিন্তু সে পতি ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।” ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি
জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, অথচ আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি। তার মধ্যে মানবীর সংখ্যাই বেশী দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? উনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা কবুল করে না। তুমি যদি তাদের কারো ওপর যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে তার সাধ পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলামnনা।
৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা। ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান রাদিআল্লাহ আনহু হতে ব্যাখা করেন, “যে মানবী কোন রিজন ছাড়া জামাইয়ের নিকট তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।”
৫. বে-আইনি ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” এইখানে নারীদের শয়তানের ১টি ধাপ্পা থেকে সতর্ক করছি, দোয়া করি রব তাদের সুপথ উৎসর্গ করুন। রিজন নোটিশ যায় স্বামী যখন তাকে কোন জিনিসের আদেশ করে, সে এই হাদিসের দোহাই দিয়ে বলা হয়ে থাকে এটা হারাম, এটা নাজায়েজ, এটি জরুরি নয়। উদ্দেশ্য
স্বামীর আদেশ উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি ভাবা করিয়ে দিচ্ছি, রব তা’আলা বলেন, “যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে, কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো দেখবেন।” হাসান বসরি রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের বিষয়ে খোদা ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা নিরেট কুফরি।”
৬. স্বামীর আজকাল তার অনুমতি ব্যতীত রোজা না রাখা। সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে তার পারমিশন ছাড়া রোজা রাখবে না।” যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে স্বামী আপন লভ্য কর্তৃত্ব হতে বঞ্চিত থাকে, যা কক্ষনো গুনার রিজন থেকে পারে। এখানে রোজা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা উদ্দেশ্য। কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার, আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে বড়।
৭. স্বামীর ডেকে আনে সাড়া না দেওয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের বিছানায় ডাকে, আর বিবি তার ডাকে সাড়া না দেয়, এভাবেই জামাই রাত যাপন করে, সে স্ত্রীর ওপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অভিসম্পাত করে।”
৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশ না করা : আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কিছু পুরুষ বিদ্যমান যারা ব্যক্তিগত স্ত্রীর সঙ্গে কৃত আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কয়েকটি নারীও আছে যারা স্বীয় বরের ব্যাপারগুলো প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না। আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী- পুরুষেরা এরূপ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ করো না। এটি তো শয়তানের মতো যে রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল, আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”
৯. স্বামীর ঘর ছাড়া আরেক কোথাও উলঙ্গ না হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে রমণী জামাইয়ের ঘর ব্যতীত আরেক কোথাও দেহ সম্পূর্ণ অনাবৃত হল, সৃষ্টিকর্তা তার গোপনীয়তা বিকৃত করে দেবেন।”
১০. বরের পারমিশন ছাড়া কাউকে তার কক্ষে ঢুকতে না দেয়া। বুখারিতে আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার পারমিশন ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”
১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়া। সৃষ্টিকর্তা তা’আলা বলেন, “তোমরা কামরায় অবস্থান কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হয়ো না।”
মানবীর জন্য জামাইয়ের আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি ওয়াজিব। বরের খেদমতের উদাহরণ: মুসলিম বোন! জামাইয়ের খেদমতের বিষয়ে একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ বহু হবে বলা হয়ে থাকে আমার ধারণা। তারা কীভাবে বরের খেদমত করেছেন, জামাইয়ের কাজে হেল্পের সই রেখেছেনÑ প্রভৃতি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ উপস্থাপনার পরিবর্তে ১টি উদাহরণই প্রচুর হবে, আমার কঠিন বিশ্বাস।
আসমা বিনতে আবু বকর হতে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন শাদি করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের অশ্ব ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কয়েকটি ছিল না। উনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করতাম, অশ্ব মাঠে চরাতাম, জল পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম, পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম দিতাম। আমি ভাল করে পাঁউরুটি বানাতে জানতাম না, আনসারদের কয়েকটি মেয়েরা আমাকে এই জন্য সহযোগিতা করত। তারা আমার আসল বান্ধবী ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিতরণ করা জুবায়েরের জমি হতে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায় এক মাইল দূরত্বে ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি নারীরা পুরুষের দখল সম্মন্ধে জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাদ্যের সময় হলে, তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না।” বিয়ের পর মেয়েকে টার্গেট করে উম্মে আকেলার উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি জ্যেষ্ঠ হয়েছ, যারা তোমার নিজ জন ছিল, তাদের ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ, যাহার স্বভাব নিসর্গ সম্মন্ধে তুমি কতিপয় জান না। তুমি যদি তার দাসী থেকে পার, সে তোমার অনুগত হবে। আর দশটি বিষয়ের প্রতি অনেক নজর রাখবে। ১-২. অল্পতে তুষ্টি থাকবে। তার তার অনুসরণ করবে এবং তার সঙ্গে বিনয়ী থাকবে। ৩-৪. তার আঁখি এবং নাকের আপিল পূর্ণ করবে। তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয় গন্ধ গাত্রে রাখবে না। ৫-৬. তার নিদ্রা ও খাবারের প্রতি অতন্দ্র দৃষ্টি রাখবে। মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে বিষণœতার প্রস্তুত হয়। ৭-৮. তার অর্থ হেফাজত করবে, তার সন্তান ও
বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে। মনে রাখবে, কিছুর আসল হলো সম্পদের নির্ভুল ব্যবহার, সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। পুরুষদের উদ্দেশে দুইটি কথা : ঊর্ধ্বের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের আলোকে মুসলমান বোনদের জন্য সঠিক পক্ষ নির্দেশনা প্রদান করার চেষ্টা করেছি মাত্র। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কোন গিন্নী এই সবগুণের
বিপরীত করলে, তাকে আরাম দেওয়া জামাইয়ের জন্য হালাল হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মোমিন লোক কোন মোমিন মানবীকে বিয়ে বন্ধন হতে বিচ্ছিন্ন করবে না, তার একটি অভ্যাস ভালো না হলে, অপর আচরণে তার উপর খুশি হয়ে যাবে।” তুমি যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ পক্ষান্তরে তার কোন খারাপ চরিত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কর, কিন্তু তোমার সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাকে পরামর্শ দেয়া, নসিহত করা, প্রভু এবং তার শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। তার পরেও যদি সে অনুগত
না হয়, কর্কশ হ্যাবিট ত্যাগ না করে, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে তার থেকে বিছানা আলাদা করে নাও।খবরদার! বাড়ি থেকে বের করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঘর ব্যতীত আরেক কোথাও স্ত্রীকে পরিত্যাগ কর না।” এতে যদি সে শুধরে যায়, ভাল। অন্যথায় তাকে আবার নসিহত কর, তার থেকে বিছানা আলাদা কর।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে নারীদের নাফরমানির আশঙ্কা কর, তাদের উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ছেড়ে কর, ঘা কর, যদি তোমাদের আনুগত্য করে, কিন্তু অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না।”
“তাদের আঘাত কর” এর ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির রহ. বলেন, যদি তাদের উপদেশ দেওয়া এবং তাদের থেকে বিছানা আলাদা করার পরও তারা স্বয়ং অবস্থান থেকে দূরে না আসে, তখন তোমাদের আধিপত্য রয়েছে তাদের পাতলা ক্ষত করা, যেন শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। জাবের রাদিআল্লাহ আনহু হতে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন, “তোমরা
নারীদের ব্যাপারে খোদাকে ভয় কর, তারা তোমাদের নিকট মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে। তোমরা তাদের মালিক নও, আবার তারা তোমাদের থেকে মুক্তও নয়। তাদের কর্তব্য, তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে জায়গা না দেয়া, যাদের তোমরা অপছন্দ কর। যদি এর বিপরীত করে, এমনভাবে তাদের চোট কর, যাতে দেহের কোন স্থানে আঁচড় না পড়ে। তোমাদের সমীচীন সাধ্য মোতাবেক তাদের ভরন-পোষণের অ্যারেঞ্জমেন্ট করা।” প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য মুফাসসির আঁচড় বিহীন চোট বলেছেন। হাসান বসরিও তাই বলেছেন। অর্থাৎ যে প্রহারের কারণে শরীরে আঁচড় পড়ে না।” চেহারাতে আঘাত করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চেহারায় ঘা করবে না। স্বামীর উপর স্ত্রীর কর্তৃত্ব : পতি যেমন কামনা করে, বিবি তার দায়িত্ব পালন করবে, তার সকল হক আদায় করবে, তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। একারণে স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর সকল হক আদায় করা, তাকে কষ্ট না দেয়া, তার অনুভূতিতে প্রহার হানে এইরকম আচরণ থেকে বিরত থাকা। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত, হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার আব্বা থেকে বর্ণনা করেন, আমি বললাম, “আল্লাহর রাসূল, আমাদের ওপর স্ত্রীদের কী কী কর্তৃত্ব রয়েছে? উনি বললেন, তুমি যখন খাবে, তাকেও খেতে দেবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও পরিধান করতে দেবে। চেহারায় ঘা করবে না। স্বয়ং ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার বিছানা আলাদা করে দেবে না।” আরেক বর্ণনায় আছে, “তার শ্রী বিনষ্ট করিও না।” বুখারি, মুসলিম এবং আদার্স হাদিসের কিতাবে আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম, তুমি দিনে রোজা রাখ, রাতে নামাজ পড়, এ খোজ-খবর কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল। উনি বলেন, এইরকম কর না। রোজা রাখ, রোজা
ভাঙ্গো। নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ তোমার ওপর দেহের হক রয়েছে, চোখের হক রয়েছে, স্ত্রীরও হক রয়েছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, যেটার দু’জন বউ রয়েছে, আর সে
একজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল, কিয়ামতের দিন সে একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।” সম্মানিত পাঠক! আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ হলেও তার আপিল কিন্তু ব্যাপক। এখন আমরা
আল্লাহর দরবারে তার বেশ ভালো ভালো নাম, মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়ে প্রার্থনা করি, তিনি আমাকে ও যাবতীয় মুসলমান ভাই-বোনকে এই কিতাব মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার তাওফিক সম্প্রদান করুন। আমরা এরূপ না হয়ে যাই, যারা আপন দায়িত্ব আদায় না করে, স্ত্রীর হক উশুল করতে চায়। আমাদের লক্ষ্য কারো অনিয়মকে সমর্থন না করা এবং এক পক্ষের ক্রাইমের ফলে অপর পক্ষের অপরাধকে বৈধতা না দেয়া। বরং আমাদের উদ্দেশ্য প্রত্যেককে নিজস্ব আপন দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য সচেতন করা। পরিসমাপ্তি অবশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের কল্যাণকামী হোন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ, তাদের পাঁজরের হাড্ডি মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি সবচে’ বেশিবাঁকা। (যার দ্বারা তাদের সৃষ্টি করা
হয়েছে।) যদি সরল করতে চাও, ভেঙে ফেলবে।আর রেখে দিলেও তার বক্রতা মুছে হবে না, তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।” নারীদের সাথে উপকার কামনার অর্থ, তাদের সঙ্গে উত্তম ইউজ করা, ইসলাম শিক্ষা দেয়া, এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; খোদা এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার আদেশ দেয়া, হারাম জিনিস হতে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া। আশা করি, এই প্রক্রিয়ার ফলে তাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হবে। দরুদ ও অভিবাদন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরের উপর। আমাদের সর্বশেষ কথা, “আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি দু- জাহানের পালনকর্তা।”
মুসলিম মহিলার পর্দার ইম্পোর্টেন্ট শর্তসমূহ
১. যাবতীয় দেহ ঢাকনা : স্রষ্টা তাআলা বলেন,
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যা সাধারণত পাবলিশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না।
তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, জামাইয়ের ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজস্ব নারীগণ, তাদের ডান হাত যেটার মালিক হয়েছে, অধীনতা যৌনকামনামুক্ত পুরুষ কিংবা নারীদের গোপন শরীর সম্পর্কে বেকুব বালকছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য পাবলিশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম থেকে পার।”
অন্যত্র বলেন,
“হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে , কন্যাদেরকে এবং মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কয়েকটি অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদের সবাইকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।”
২. কারুকার্য ও প্রতিমূর্তি বিহীন পর্দা ব্যবহার করা : তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত-
َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ “তারা ব্যক্তিগত রূপ- লাবণ্য এবং সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এই আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও অন্তর্ভুক্ত। কারণ সৃষ্টিকর্তা তাআলা যে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে সৌন্দর্যকে আরেকটি সৌন্দর্য মাধ্যমে আবৃত করাও নিষেধের আওতায় আসে। তদ্রুপ সে সকল নকশাও নিষিদ্ধ, যা পর্দার বিভিন্ন জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা নারীরা মাথার ওপর আলাদাভাবে বা শরীরের
কোন জায়গায় যুক্ত করে রাখে। রব তাআলা বলেন,
َﻥْﺮَﻗَﻭ َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ َﻦْﺟَّﺮَﺒَﺗ َﺝُّﺮَﺒَﺗ
ِﺔَّﻴِﻠِﻫﺎَﺠْﻟﺍ ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ﴿৩৩﴾ (ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ-৩৩)
“আর তোমরা স্বীয় গৃহে অবস্থান করবে ও প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করো না।” ﺝﺮﺒﺘﻟﺍ অর্থ: মহিলার এইরকম সৌন্দর্য এবং রূপ- লাবণ্য পাবলিশ করা, যা পুরুষের যৌন উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি প্রস্তুত করে। এ রূপ অশ্লীলতা প্রদর্শন করা কবিরা গুনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিনজন ব্যক্তি সম্মন্ধে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই বিনাশ হবে।) যথা : ক. যে মানুষ মুসলমানদের জামাত থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল। খ. যে
গোলাম বা দাসী স্বীয় মনিব থেকে পলায়ন করল ও এ অবস্থায় সে মারা গেল। গ. যে মানবী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল।”
৩. পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে পর্যাপ্ত হাদিস বলা হয়েছে হয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ইউজ করে নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম। সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এইখানে দৃষ্টান্ত স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি, উনি বলেন, “যে মানবী সুগন্ধি ইউজ করে বাইরে বের হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে মানবী ব্যভিচারিণী।”
৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এরূপ চিকন এবং সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া। ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে ব্যাখা করেন, “দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া, বুননের একটি কিবতি বস্ত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পরিধান করতে দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার, বস্ত্র পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহরmরাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি বললেন, তাকে বল, এর নীচে যেন সে সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ কাপড় তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে।”
৫. পর্দা দেহের রং প্রকাশ করে দেয় এরূপ চিকন না হওয়া। সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জাহান্নামের দু’ প্রকার মানুষ আমি এখনো দেখিনি :
(ক). সে মানুষ যারা গরুর লেজের মত বেত বহন করে চলবে, আর মানুষদের আঘাত করবে।
(খ). সে সকল নারী, যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ থাকবে, অন্যদের প্রলুব্ধ করবে ও তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।
৬. মানবীর পর্দা পুরুষের কাপড়ের ন্যায় না হওয়া। ইমাম বুখারি ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী মহিলা এবং নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের ওপর অভিসম্পাত করেছেন।”
৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা ব্যক্তি যার প্রতি অঙ্গুলি আদেশ করে, পর্দা এমন কাপড়ের না হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “যে ব্যক্তি যশ সুখ্যাতির কাপড় পরিধান করবে, খোদা তাকে কিয়ামতের দিন অনুরূপ পোশাক পরিধান করাবেন, অতঃপর জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ করবেন।” সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে বস্ত্র পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট এবং দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-ভোগ এবং চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী ব্যক্তিরাই পরিধান করে। এ হুকুম নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ ধরনের পোশাক দুষ্ট উদ্দেশ্যে পরিধান করবে, জটিল হুমকির মুখোমুখি হবে, যদি তওবা না করে মারা যায়।
৮. পর্দা বিজাতীয়দের কাপড় সাদৃশ্য না হওয়া। ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ এবং আদার্স মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন, “যে লোক কোন সম্প্রদায়ের সঙ্গে অভিন্নতা রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে গণ্য।” এরশাদ হচ্ছে,
ْﻢَﻟَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ِﻥْﺄَﻳ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ْﻥَﺃ َﻊَﺸْﺨَﺗ
ْﻢُﻬُﺑﻮُﻠُﻗ ِﺮْﻛِﺬِﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣَﻭ َﻝَﺰَﻧ َﻦِﻣ ِّﻖَﺤْﻟﺍ
ﺍﻮُﻧﻮُﻜَﻳ ﺎَﻟَﻭ ﺍﻮُﺗﻭُﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﺎَﻛ َﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ ْﻦِﻣ
ُﻞْﺒَﻗ ﴿১৬﴾ (ﺪﻳﺪﺤﻟﺍ:১৬)
“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে উত্তম নাজিল হয়েছে, তার কারণে তরল হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল।” ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ জন্য প্রভু তাআলা মোমিনদেরকে মূল পক্ষান্তরে আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন। ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক এবং সব ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা যাবে না।”
সম্পন্ন
0 মন্তব্যসমূহ