Recents in Beach

পাপী ব্যক্তির শাস্তি - Islamic Stories(ইসলামী গল্প)

পাপী ব্যক্তির শাস্তি 
পাপী ব্যক্তির শাস্তি - Islamic Stories(ইসলামী গল্প)
পাপী-ব্যক্তির-শাস্তি-ইসলামিক-গল্প

ইরাকের মুছেলের এক সৎ ব্যক্তি, যাহার নাম ছিল আলী ইবনু হারব। উনি বলেন, আমি নিত্য প্রয়োজনীয় কতিপয় জিনিস কেনা করার জন্য মুছেল থেকে সুররামান রায়া নামক স্থানে যাচ্ছিলাম। সে সময় দাজলা নদীতে কিছু নৌকা ছিল। যেগুলো ভাড়ায় লোকজন ও মালামাল পারাপার করত। আমি একটি নৌকায় আরোহণ করলাম ।
নৌকা আমাদেরকে নিয়ে সুররামান রায়ার দিকে চলতে চালু করল । নৌকায় মালামাল ছাড়া আমরা পাঁচ জন যাত্রী ছিলাম। আবহাওয়া ছিল চমৎকার। আসমান খুব পরিচ্ছন্ন ছিল । দাজলা নদীও ছিল শান্ত । নৌকা তরতর করে বয়ে চলছিল । যাত্রীদের অনেকেই তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল । আমি দাজলা নদীর উভয় তীরের সৌন্দর্য অবলোকন করছিলাম । আচমকা পানি থেকে ১টি জ্যেষ্ঠ মাছ লাফিয়ে নৌকায় এসে পড়ল । আমি ছুটে গিয়ে মাছটি ধরে ফেললাম । বিশালকায় মাছের লেজের ঝাপটানিতে লোকদের  দূর হয়ে গেল। মাছ দেখতে পেয়ে তাদের একজন বলল, এই মাছ খোদা তা‘আলা আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন । আমরা সামনে কোন তীরে নেমে মাছটি ভুনা করে খাব । সকলে একমত হওয়ায় তীরের দিকে নৌকা ঘুরিয়ে দেওয়া হ’ল। আমরা তীরে অবতরণ করে গাঢ় গাছ বিশিষ্ট এক স্থানে অবস্থান করলাম, যাতে জ্বালানী জমা করে মাছটি রান্না করা যায়।
আমরা সেখানে এক আশ্চর্য দৃশ্য দেখলাম। ১টি মৃতদেহ মাটিতে পড়ে আছে, পাশেই পড়ে রয়েছে একটি অতি তীব্র চাকু। দূরে নয় ভিন্ন এক যুবক হাত-পা ও মুখে কাপড় বাঁধা। সে বাঁধন মুক্ত হওয়ার প্রানান্ত ট্রাই করছে। আমরা ফাস্ট সম্মুখে গিয়ে ঐ ব্যক্তির সব বাঁধন খুলে দিলাম। তার চেহারায় অত্যন্ত ভয় এবং নিরাশার ছাপ ছিল। বাঁধন মুক্ত হয়ে সে বলল, কৃপা করে আমাকে একটু জল দাও। আমরা তাকে জল দিলাম। অতঃপর আমাদের সবাইকে সে পূর্ণ ঘটনা শুনাল। সে বলল, আমি এবং এই মৃত মানুষ একই কাফেলায় ছিলাম। আমরা মুছেল হতে বিজনেসের উদ্দেশ্যে বাগদাদ যাচ্ছিলাম। এই নিহত ব্যক্তি ভাবল যে, আমার নিকট প্রচুর টাকা-পয়সা আছে। একারণে সে আমার সাথে আন্তরিকতা গড়ে তোলে ও আমার ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হয়। আমারও তার উপর যথেষ্ট ভরসা ছিল। কাফেলা বাগদাদ যাওয়ার পথে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এই তীরে তাঁবু ফেলল। রাতের সমাপ্ত অংশে কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেল। কিন্তু আমি ঘুমিয়ে থাকায় কাফেলা রওয়ানা হওয়ার কথা জানতে পারিনি। আমার ঘুমের মধ্যে নিহত মানুষ আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। মুখও বস্ত্র দিয়ে বেঁধে দেয়, যাতে আমি চিৎকার করতে না পারি। এরপর সে আমাকে খুন করার জন্য মাটিতে ফেলে দিয়ে আমার বুকের ওপর বসে  করতে ক্ষিপ্ত হয়। তখন আমি বললাম, ওহে! তুমি আমার  টাকাকড়ি নিয়ে নাও, অথচ আমাকে প্রাণে মের না। সে এতে রাযি হ’ল না; বরং তার বেল্টের সাথে বেঁধে রাখা অতি তীব্র চাকু বের করার ট্রাই করল। তবুও সে সহজে চাকুটি বের করতে পারল না। ফলে সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চাকু বের করতে গেল। এতে চাকু তার নিজ গলায় বিদ্ধ হয়ে শাহরগ কেটে গেল। তার প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হ’লে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ।
এ পাপিষ্ঠ আমার চোখের সম্মুখে তার দুষ্কর্মের শাস্তি পেয়ে গেল । আমি মৃত্যুর বিষয়ে শিওর হয়ে গিয়েছিলাম । কেননা আমরা যেখানে আছি, অফার লোকই এ রাস্তা দিয়ে যায়। ফলে বাঁধনমুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। অবশেষে আমি আল্লাহর কাছে দো‘আ করলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার কাছে কাউকে পাঠিয়ে আমাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার কর। আমি সর্বদা এ দো‘আই করছিলাম। এ কারণেই হয়ত রব তোমাদের সবাইকে পাঠিয়ে আমাকে রক্ষা করেছেন। বলতো, তোমরা কি কারণে এই জনমানবহীন স্থানে আসতে আয়ত্ত হয়েছ?
কাফেলার লোকেরা বলল, একটা মাছ আমাদেরকে তোমার নিকট আসতে বাধ্য করেছে । যেটা জল হতে আমাদের নৌকায় লাফিয়ে উঠেছিল । আমরা এই মাছ ভুনা করে আহার জন্য এখানে এসেছি। কাফেলার লোকদের কথা শুনে ঐ মানুষ অস্বাভাবিক হয়ে বলতে লাগল, নিঃসন্দেহে সৃষ্টিকর্তা তা‘আলা ঐ মাছটিকে তোমাদের নৌকায় পাঠিয়েছিলেন আমাকে এ ঝুকিপুর্ণ হতে উদ্ধার করার জন্য । এরই ভিতরে মাছটি নৌকা হ’তে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে অলক্ষ্য হয়ে গেল । সবার ধারণা হ’ল যে, খোদা মাছকে ঐ ব্যক্তির জীবন রক্ষার জন্যই পাঠিয়েছিলেন ।
এভাবে যখন খোদা তা‘আলা কিছু করতে চান, সেই সময় তার জন্য রিজন তৈরি করে দেন (বুখারী হা/৩৭৭৩)। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘মযলূমের দুষ্ট দো‘আ থেকে সরে থাক। কেননা মযলূমের দো‘আ ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল থাকে না’। (বুখারী হা/২৪৪৮; মুসলিম হা/১৯; ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক ২৬/৩৮৫; ইবনু মুল্লাকান, ত্বাবাকাতুল আওলিয়া ১/১৮০) ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ