![]() |
পাত্রী-চাই - Islamic-Stories |
“আপা বেটি তো খুঁজে পাচ্ছি না।” চেয়ারে বসতে বসতে হতাশ সুরে আল আমিনের প্রসূতি বললেন।
“আপা অফার বেটি তো দেখলেন না, কাউকেই তো আপনার লাইক হল না।” সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দিলেন ভানুর শাশুড়ি।
“এটা কী বললেন আপা? একমাত্র ছেলে আমার একটু দেখে শুনে বিবাহ দিব না?”
“তা অবশ্যই। অথচ পনেরো-বিশটা মেয়ের কাউকেই আপনার পছন্দ হল না?”
“না ইয়ে মানে, বলতে চাচ্ছিলাম আর কি আপনার ছোট বউটা কী যেন নাম? নীতু? প্রসূতি শা আল্লাহ্ রুপে গুণে পরীর মত আপা। অমন একটা পত্নী পেলে আর কতিপয় লাগে বলেন? অমন মেয়ে তো একটাও পেলাম না।”
মায়ার শাশুড়ি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “আপা আমার ঘরে তবুও তিনটা বউ। একজন বেশি ফর্সা অনেক ভালো মানে যে বাকীদের কোন মূল্য নেই তা কিন্তু না। আমার চোখে ওরা তিনজনই সমান।”
“না আপা আপনার তিন বউই অনেক ভাল গর্ভধারিণী শা আল্লাহ্। অথচ ছোট বউটাকে আমার একদম পরীর মত লাগে।”
“আপা এটাই তো আমাদের সমস্যা! আসলে আমরা যতোই মুখে ধর্মের কথা বলি না কেন সামাজিক সমস্যাগুলো থেকে নিজেদেরকে আমরা বের করতে পারিনি এখনো। যেখানে গায়ের রঙ এর উপর মেয়েকে দেওয়া হয়, কক্ষের কাজ করতে পারে না মানে সেই বেটি সংসার করার যোগ্যই না। বাপের বাড়ির টাকা পয়সার ওপর মেয়েকে খাতির করা হয়।
“ ঠিকই বলেছেন আপা। আসলে অনেক ভালো শিক্ষিত একটা বউ না আনলে আত্মীয় স্বজনরাই পরে কথা শোনাবে। এ আর কি।”
“তা বটে! আমরা তো প্রভু কে ছাড় মানুষকে অধিক ভয় পাই। কমিউনিটি বলা হয় কথা!”
“কী যে বলেন আপা! কমিউনিটি ছাড়া কে চলতে পারে বলেন? আচ্ছা আমাকে আর কয়টা মেয়ের সংবাদ দিয়েন তো। ছেলেটা বিবাহ বিবাহ করে মাথা খাচ্ছে।”
“তো খাবে না? বয়স তো কম হল না ছেলের। যাদের কে বাতিল দিয়েছিলেন তাদের ভেতর থেকেই দেখেন না হয় আবার।”
“তারা তো সবাই এখনো অধ্যায়ন করছে!”
ভানুর শাশুড়ি আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “এই যে একটু প্রথমে আমার ছোট পত্নী এর সুনাম করলেন, ও তো এখনো লেখাপড়া করছে। সঙ্গে সংসারও সামলাচ্ছে প্রসূতি শা আল্লাহ। ওর ক্লাস এর সময়, এক্সামের সময় আর পড়ার সময় ওর কাঁধে কোন কাজ দেই না আমরা, আমার বাকি দুই বউও এ বিষয়ে অধিক হেল্প করে জননী শা আল্লাহ্। একটু তো ছাড় দিতেই হবে শিক্ষিত স্ত্রী চাইলে এইজন্য না?”
“এটা তো পর্যাপ্ত জ্যেষ্ঠ প্রবলেম আপা! পাশের বাসার রোজিনা ভাবীর পত্নী এ পড়ার নাম করে নিজের বাড়ি থেকেই বের হয়না! আমি ছেলের বিয়ে দিব নিজে একটু আরাম করব তাই। এই বয়সে আর কতো যায় বলেন?”
ভানুর শাশুড়ি অবাক হয়ে বললেন, “আপা আপনার মেয়ের পড়ার সময় কি আপনি তাকে একটু ছাড় দেন না কাজ কর্ম থেকে? তাহলে স্ত্রী কে কি জন্য দিবেন না? সে শিক্ষিত হলে কি আপনার কোন লাভ নেই? আপনার বংশধর একজন শিক্ষিত মাতা পাচ্ছে আপনি একজন শিক্ষিত পত্নী পাচ্ছেন। মানুষকে আরো গর্ব করে বলতে পারছেন আপনি আপনার বিবি এর পড়ালেখায় সহযোগিতা করেছেন! আর সে তো সারাজীবন পড়া করছে না।”
“না আপা। অতঃপর পাঠাভ্যাস সম্পন্ন করে বলবে জব করব! তখন? আমার ষোলকলা পূরণ হবে।”
“তাহলে আপনিই সিদ্ধান্ত নেন কী করবেন। ছেলের বয়স ৩৩ কিনারা থেকে চলল এখনো আপনি এতো খুত খুত করছেন মেয়ের ব্যাপারে। এটি কী নির্ভুল হচ্ছে? আপনি নিজেকেই প্রশ্ন করুন।”
“নাহ আপা, এটিও ঠিক বলেছেন। কবে না কবে মরে যাই তার আগে নাতী নাতনীদের মুখ দেখব না?”
ভানুর শাশুড়ি হেসে দিয়ে বললেন, “সন্তান নেওয়াটা কী মানুষের হাতে নাকি? আল্লাহ্ যখন চাইবেন তখনই না দিবেন!
“তা ঠিকই। আমি দীপু কে বলা হয় দিয়েছি বিয়ের ৬ মাসের ভেতর প্রমোশনের অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে নয়তো কোথাও ছুটির দুই দিন পার্ট সময় আরম্ভ করতে। বাচ্চার জন্য অতিরিক্ত আছে না?”
মায়ার শাশুড়ি শেষবারের মত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “আজ আমি উঠি আপা। জ্যেষ্ঠ ছেলেটা চাকরী ছেড়ে দিয়েছে বিগত মাসে। আজকে ওর অন্য জায়গায় ইন্টার্ভিউ, ওদিকে ওর স্ত্রী এর ডেলিভারি ডেইট আগামি মাসে। এ নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। জ্যেষ্ঠ পত্নী ভোরে বলল, একদম স্মরণ করবেন না মা। রিযিকের মালিক আল্লাহ্! কোথাও না কোথাও হতে কতিপয় না কয়েকটি ঠিকই অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ্ এইরকম অবস্থায় আমি ওকে স্বান্তনা দিব কী উলটা সেই আমাকে বোঝাচ্ছে! বাসার সবাই একটু আধটু ধ্যান করলেও আল্লাহ্র উপর আমাদের ভরসা আছে নিশ্চয় উনি সন্তুষ্ঠজনক কিছুই রেখেছেন আমাদের জন্য। এমন একটা সময় হায় হুতাশ না করে আমরা দুয়া করে যাচ্ছি। আল্লাহ্ তো বলেছেনই আমি আমার বান্দার প্রতি তেমনই যেমন সে আমার ওপর ধারণা রাখে।
ইন শা আল্লাহ্ ঠিক হয়ে যাবে। আমার পোলা নিশ্চয় সারা জীবন বেকার বসে থাকবে না? সে অনেক দায়িত্ববান। বর্তমান তার প্রয়োজন একটু মানসিক সাপোর্ট। যেটা দেওয়ার চেষ্টাই আমরা করছি। দুয়া করবেন আমাদের জন্য। আমিও দুয়া করব যেন আপনার ছেলে অনেক ভালো একজন পাত্রী পেয়ে যায় যে মনে প্রানে একজন ভাল ব্যক্তি হবে, সামাজিক কলুষতা থেকে যে নিজেকে মুক্ত করে সুষ্ঠু স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে ইন শা আল্লাহ্ ।
“আপনাদের কথা শুনে তো আমিই টেনশন এ পরে গেলাম আপা! এ কী সিচুয়েশন আপনাদের? এরূপ কি জন্য হল? খাদ্যে ছেলেটা! আচ্ছা ছোট্ট শিশু হওয়ার খরচ তো মেয়ের ঘর থেকেই দেওয়ার কথা, তাই না?”
“এটা কী বললেন আপা? ছোট্ট শিশু হবে আমার ছেলের! বংশধর আসবে আমার! সেটার খরচ মেয়ের বাপের আলয় কেন দিবে? এসব প্রথা অধিক উৎকর্ষ শীঘ্রই মুছে না করলে সাংসারিক অশান্তি গুলোও কোনদিনও শেষ হবে না আপা।
আলহামদুলিল্লাহ্। আমরা দুশ্চিন্তা করছি না। আপনিও করবেন না। শুধুমাত্র সম্ভব হলে দুয়া করবেন।
আজ তাহলে আসি।
ফি আমানিল্লাহ।”
“ফি আমানিল্লাহ আপা।” অতঃপর আল আমিনেরমা অক্ষি মুখ কুঁচকে অগাধ চিন্তায় ডুবে গেলেন।
0 মন্তব্যসমূহ