Recents in Beach

কাবিল ও হাবিলের কাহিনী - Islamic Stories

কাবিল হাবিলের কাহিনী

কাবিল ও হাবিলের কাহিনী - Islamic Stories
কাবিল-ও-হাবিলের-কাহিনী - Islamic Stories


কাবিল এবং হাবিল নামে দুই ভাইয়ের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অতিমাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের ইতিহাস অনুসারে কাবিল এবং হাবিলের মাধ্যমেই ১ম কুরবানি চালু হয়। তাদের মধ্য থেকেই বিশ্বে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ও তাদের মাধ্যমেই মৃতদেহ  দেবার নিয়ম আরম্ভ হয়। জুমার নামাজের আগে কিংবা কুরবানির ঈদের নামাজের প্রথমে বিশেষ আলোচনায় কুরবানির ইতিহাস সম্বন্ধে আলোকপাত করতে গিয়ে ইমাম সাহেবরা প্রায় সময়ই কাবিল ও হাবিলের ঘটনার উল্লেখ করেন। খ্রিস্টধর্মে তাদেরকে কেইন এবং এবেল নামে ডাকা হয়। কাবিল এবং হাবিলের ঘটনা সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলে উল্লেখ করতে হবে তাদের পিতা হযরত আদম (আ:) এবং জন্মদাত্রী স্ত্রী বাতাস (আ:) এর কথা।
হযরত আদম (আ:) এবং পত্নী হাওয়া (আ:) উভয়ে জান্নাতের সুসজ্জিত বাগানে বসবাস করছিলেন। অথচ তাদের পিছু লাগলো ‘ইবলিস’ নামে এক পাপিষ্ঠ শয়তান। ইবলিস চাইলো তারা যেন সুখের জান্নাতে থাকতে না পারে। যতটা না সুখের জান্নাত থেকে বিতাড়িত করার ইচ্ছে ছিল ইবলিসের, তারচেয়েও বহু ইচ্ছে ছিল তারা যেন আল্লাহর দেয়া নির্দেশ অমান্য করে তাঁকে নাখোশ করে। আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)-কে সৃষ্টিকর্তা একটি বিশেষ গাছের ফল খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করেছিলেন। ইবলিস বেছে বেছে ঐ বিশেষ ফলটিকেই টার্গেট করলো। দুজনকে প্ররোচিত করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ঐ উদ্ভিদের ফল খাইয়ে দিলো। আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) দৃশ্যত দুষ্কর্ম করে বসলেন। জান্নাতে পাপের জায়গা নেই, একারণে শাস্তিস্বরূপ খোদা তাদেরকে জগতে পাঠিয়ে দিলেন।  হলো, পৃথিবীতে সুন্দর কাজ করে নিজেদের মার্জনা করতে পারলে তারা আবারো জান্নাতে ফিরে যেতে পারবেন।

কিন্তু অশান্তি তারপরও রয়ে গেল, রিজন পৃথিবীতেও অস্তিত্ব বিরাজমান সেই পাপিষ্ঠ শয়তান ইবলিসের। ইবলিস শয়তান তার সমাপ্ত মনস্কাম হিসেবে আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ কয়েকটি ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছিল। অভিশপ্ত হবার আগে ইবলিস আল্লাহর পর্যাপ্ত ইবাদত করেছিল। এ ইবাদতের প্রতিদানস্বরূপ সৃষ্টিকর্তা তাকে তার ডিমান্ড অনুযায়ী এ ক্ষমতাগুলো প্রদান করেছিলেন। স্বীকৃত ক্ষমতাগুলোর ভিতরে ১টি হলো, যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো স্থানে সে অবস্থান করতে পারবে। সে হিসেবে আদম-হাওয়ার জগতে চলে আসা তার জন্য তেমন দৃঢ় কয়েকটি নয়।
যা-ই হোক, পৃথিবীতে আগমনের পর হযরত আদম (আ:) ও বউ বাতাস (আ:) এর সন্তান উদ্ভব হতে লাগলো। সন্তপর্ণে ধীরে মানুষ বাড়তে লাগলো পৃথিবীতে। তা সত্ত্বেও এইখানে দৃশ্যত একটি সীমাবদ্ধতা থেকে গেল। আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) যেহেতু জগতের ১ম মানব-মানবী, একারণে তাদের পরবর্তী প্রজন্মে যত সন্তানের আবির্ভাব হবে তারা সকলেই হবে ভাই-বোন। ইসলামী নিয়ম অনুসারে, ভাইয়া বোনের মাঝে কোনো সময়েই বিয়ে হয় না। সে হিসেবে এটিই হতো পৃথিবীর সমাপ্ত মানুষ প্রজন্ম। তারপর মানবজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতো। অথচ এইখানে তো অবিরাম মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন, এজন্য বিশেষ একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে এর সমাধান করা হলো।

বিবি হাওয়ার গর্ভে তখন সন্তান উৎপত্তি নিতো জোড়ায় জোড়ায়। প্রতি জোড়ায় একজন পোলা আর একজন মেয়ে জন্ম হতো। একই জোড়ার পোলা এবং মেয়েরা পরস্পর বিবাহ করতে পারবে না। বিয়ে করতে হলে আরেক জোড়ার কাউকে করতে হবে। কাবিল এবং হাবিল ছিল অন্য জোড়ার, এইজন্য তাদের ব্যাপারটি স্বাভাবিক নিয়মেই সমাধান হয়ে যায়। একজন আরেকজনের জোড়ার মেয়েকে বিবাহ করবে।

কিন্তু এইখানে ১টি সমস্যা নোটিশ দেয়। হাবিলের জোড়ার মেয়েটি তেমন সুন্দরী ছিল না। সেই তুলনায় কাবিলের জোড়ার মেয়েটি ছিল পর্যাপ্ত বহু সুন্দরী। বিধান অনুসারে হাবিল বহু সুন্দরী মেয়েটিকে পায় আর কাবিল পায় অফার সুন্দরী মেয়েটিকে। অথচ কাবিল বেঁকে বসে, সে হাবিলের জোড়ার মেয়েটিকে বিবাহ করবে না। যেভাবেই হোক, নিজের জোড়ার সুন্দরী মেয়েটিকেই শাদি করবে।

এমতাবস্থায় বাবা হযরত আদম (আ:) ১টি মীমাংসা করলেন। তাদের দুজনকে আল্লাহর নামে কুরবানি দিতে বললেন। যাহার কুরবানি রব গ্রহণ করবেন, তার ইচ্ছাই জয়ী হবে। কার কুরবানি প্রাপ্ত হচ্ছে আর কার কুরবানি গৃহীত হলো না, তা কীভাবে বোঝা যায়? তখনকার কুরবানি এখনকার কুরবানির মতো ছিল না। সে সময়ে কোনো জিনিস কুরবানি দিলে গগন হতে অগ্নি এসে ঐ জিনিসকে পুড়িয়ে দিতো। কুরবানির বস্তুকে জমি হতে উপরে কোনো স্থানে উপস্থাপন করা হতো, আকাশ থেকে অগ্নি এসে যদি বস্তুকে পুড়িয়ে দিতো, তাহলে বোঝা যেতো প্রভু দিয়ে কুরবানী স্বীকৃত হয়েছে।

পিতা আদম (আ:) এর দেওয়া মীমাংসা অনুযায়ী তারা উভয়েই কুরবানির বস্তু উপস্থাপন করলো আল্লাহর কাছে। হাবিল একটি সুস্থ ও মোটাতাজা দুম্বা অৰ্পণ করলো আর কাবিল তার কিছু সবজি এবং শস্য বিতরণ করলো। সেই সময় সবজি ও শস্যও কুরবানির জন্য দান করা যেতো। কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায়, হাবিল সম্প্রদান করেছিল উৎকৃষ্ট মানের দুম্বা আর কাবিলের শস্য ছিল মন্দ মানের। স্রষ্টা হাবিলের কুরবানিকেই  করলেন। উপর হতে অগ্নি দিয়ে দুম্বাটিকে পুড়িয়ে নিলেন, তা সত্ত্বেও কাবিলের শস্যকে কিছুই করলেন না। সে হিসেবে বিয়ের বিধান পূর্বের মতোই রইলো, হাবিল বিয়ে করবে কাবিলের জোড়ায় আবির্ভাব নেয়া মেয়েটিকে।

কিন্তু কাবিল এ অপমান সহ্য করতে পারলো না। সে ভাবলো, হাবিলের জন্য তার কুরবানি রব ধারণ করেননি। কুরবানিতে প্রত্যাখ্যাত হওয়াতে ও বিবি হিসেবে কাঙ্ক্ষিত মেয়েকে না পাওয়াতে সে অতীব ক্রোধান্বিত হয়ে গেল। ক্রোধের বশে হাবিলকে সে বললো, তোর সাধ কোনোভাবেই আমি পূরণ হতে দেবো না। প্রয়োজনে তোকে খুন করবো, যেন তুই আমার জোড়ার মেয়েটিকে শাদি করতে না পারিস। কোনো কোনো উৎস হতে জানা যায়, তাকে এরূপ সর্বনাশা ভাবনার উস্কানি দিয়েছিল সেই পাপিষ্ঠ ইবলিস শয়তান।

কাবিলের এরূপ আচরণে হাবিল অনেক চমৎকার জবাব দিয়েছিল। সে বলেছিল, প্রভু তাদের কুরবানিই  করেন যেটার লক্ষ্য সৎ। আর তুমি আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার গায়ে চোট করলেও, আমি তোমাকে কিছু করবো না। রিজন আমি আমার প্রতিপালককে ভয় করি। তবুও এ কথায় কাবিলের উদ্দেশ্যের কোনো বদলানো হলো না। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে সে খুন করলো তার আপন ভাইকে।

এরপরই কাবিলের মন গলে যায় ও অনুভব করে, আহারে, কত বড় ত্রুটি করে ফেললো সে! নিজের ভাইকে আপন হাতে মেরে ফেললো, এর চেয়ে জ্যেষ্ঠ দম্ভ আর কী থেকে পারে! ভেতরে ভেতরে সে পর্যাপ্ত অনুতপ্ত হলো এবং নিজের খারাপ কাজ কীভাবে ঢাকবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। তখনো মৃতদেহ সৎকারের ব্যাপারে কোনো নিয়মাবলি প্রস্তুত হয়নি, রিজন এর প্রথমে কোনো মানুষের মরণ ঘটেনি। মৃত দেহটিকে নিয়ে কী করবে এ নিয়ে যখন সে চিন্তায় মগ্ন তখন দেখলো, একটি কাক তার ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে ১টি গর্ত করলো। তারপর সেই গর্তের মধ্যে একটি মৃত কাককে টেনে এনে কবর দিয়ে দিলো। এটি দেখে কাবিল ভাবলো, তাকেও হয়তো এভাবে কবর দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। একারণে একটি গর্ত করে সে তার ভাইকে  দিয়ে দিলো। ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এটিই ছিল মানবজাতির প্রথম কবর। কোনো কোনো সোর্স থেকে জানা যায়, কাক দুটি ছিল ফেরেশতা ও এদেরকে আল্লাহই পাঠিয়েছিলেন, যেন এদের দেখে কাবিল শিখতে পারে।

অনেকে দাবি করে থাকেন, হাবিলের সমাধি এখনো দেখা যায় ও এটা সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত। দামেস্কের জবাবে একটি স্থান আছে, যা মাকতালে হাবিল বা হাবিলের হত্যাস্থল নামে পরিচিত। এ প্রসঙ্গে হাফিজ ইবনে আসাকির ১টি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তার ১টি বইয়ে। উনি উল্লেখ করেন, আহমদ ইবনে কাসির একবার রাসুল (সা:)-কে স্বপ্নে দেখেছিলেন। রাসুলের (সা:) সাইডে হাবিলও ছিল। এক প্রশ্নের উত্তরে হাবিল সেই সময় কসম করে বললো, এটিই আমার হত্যাস্থল। সেই সময় রাসুল (সা:) হাবিলের দাবিকে ঠিক বলা হয় সমর্থন করলেন। কিন্তু এটা শুধুই কল্পনা বলা হয়ে থাকে ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে একে গ্রহণযোগ্য বলা হয়ে থাকে ধরা হয় না।

কুরআন শরীফে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলা নেই। এমনকি তাদের দুজনের নামও উল্লেখ নেই। কেবলমাত্র ‘আদমের দুই পুত্র’ নামে তাদের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু তৌরাত গ্রন্থ ও কয়েকটি হাদিসে তাদের ঘটনার ডিটেইলস বলা আছে। ইবনে কাসিরের লেখা ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’তে এ ঘটনার বেশ ভালো বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে কাবিল এবং হাবিলের ঘটনার তাৎপর্য অনেক। কাবিল ও হাবিলের ঘটনা উল্লেখের পরপরই কুরআনে অতি ইম্পোর্টেন্ট ১টি আয়াত আছে। সেখানে উল্লেখ আছে,
কেউ কাউকে খুন করলে সে যেন সমুদয় মানবজাতিকেই খুন করলো, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সমুদয় মানবজাতিকেই রক্ষা করলো।
এ প্রসঙ্গে ১টি হাদিস আছে, রাসুল (সা:) বলেছেন,
পৃথিবীতে যখনই অন্যায়ভাবে কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, সেই সময় পাপের একটি অংশ নিশ্চয়ই আদমের প্রথম পুত্র কাবিলের ওপর পড়ে। কেননা সে-ই ১ম ব্যক্তি, যে অন্যায় হত্যাকাণ্ডের সূচনা করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ